সবসময় ডেস্ক :: চালের পর এবার আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে । দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা এবং ময়দার সর্বোচ্চ ছয় টাকা। আমদানি হলেও স্বস্তি ফেরেনি আলুর দামে। তবে মাসখানেক আগে চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির বাজার ঠান্ডা করেছে শীতের সবজি।
আটা ও ময়দার খুচরা বিক্রেতারা জানান, গত বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে অস্বাভাবিক দর বেড়ে যাওয়ার পর কয়েক মাস আগে আটা-ময়দার দাম কিছুটা কমে আসে। প্রায় তিন মাস এক রকম স্থির ছিল দাম। তবে সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বেড়েছে আটার ক্রেতা। সেজন্য আটা-ময়দার দামও বাড়তি।
এ সপ্তাহে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, তেজকুনিপাড়াসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে ৫০ কেজি ওজনের আটার বস্তায় ২০০ আর ময়দায় বেড়েছে ৩০০ টাকা। সে হিসাবে আটার কেজিতে চার এবং ময়দার কেজিতে ছয় টাকা বেড়েছে।
পাইকারিতে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়েও। বাজারে খোলা আটার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ এবং প্যাকেট আটার কেজি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে খোলা আটা ৪২ থেকে ৪৫ এবং প্যাকেট আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে খোলা ময়দার কেজি ৫৫ থেকে ৬০ এবং প্যাকেট ময়দার কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে এখন খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৬ এবং প্যাকেট ময়দার কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে খোলা আটার কেজিতে সাড়ে তিন এবং প্যাকেট আটার ১৪ শতাংশ দর বেড়েছে। একই সময় ময়দার কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ৯ শতাংশ।
তেজকুনিপাড়ার এক দোকানদার বলেন, ‘পাইকারিতে ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে ময়দার বস্তায় ৩০০ টাকার মতো বেড়েছে। আটার বস্তায় বেড়েছে ২০০ টাকার বেশি। সেজন্য খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।’
কারওয়ান বাজারের এক দোকানদার বলেন, ‘কয়েকদিনে সব ধরনের চালের দর কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়েছে। হয়তো এ জন্য আটা-ময়দার দামও বেড়েছে।’
আমদানিকারকদের তথ্যমতে, দেশে বছরে গমের চাহিদা রয়েছে ৮৫ থেকে ৮৬ লাখ টন। তবে উৎপাদন হয় খুবই সীমিত। ফলে প্রতিবছর গম আমদানি করতে হয় ৭৪ থেকে ৭৫ লাখ টন। যার সিংহভাগই আমদানি হয় ইউক্রেন থেকে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে গম আমদানি ব্যাহত হয়। তখন দেশের আটা-ময়দার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। খোলা আটার কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা থেকে ধাপে ধাপে বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় ওঠে। একইভাবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকার ময়দার কেজি বেড়ে হয় ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা।
এদিকে দুই মাস আগে সরকার খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। এর পর আলু আমদানিও হয়েছে। তবে বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা এখনও পুরোনো আলু বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। বাজারে এসেছে নতুন আলু। যা ক্রেতার নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে।
ডিলাররা পাইকারিতে চিনির দর আরও বাড়িয়েছেন। ৫০ কেজি ওজনের চিনির বস্তা গত সপ্তাহে ৭ হাজার থেকে কিছুটা কমে বিক্রি করলেও এখন বিক্রি করছেন ৭ হাজার ১০০ থেকে ৭ হাজার ২০০ টাকা দরে। তাতে খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনি কিনতে ক্রেতাকে গুণতে হচ্ছে দেড়শ টাকার মতো। এক সপ্তাহ ধরে বাজারে প্যাকেট চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।
কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে চিনির বাজার বাড়তি। ডিলাররা এখন খোলা চিনির বস্তা বিক্রি করেন ৭ হাজার ২০০ টাকায়। সেজন্য চার-পাঁচ দিন ধরে চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছি।’
ভারত রফতানি মূল্য বেঁধে দেওয়ার পর দেশের বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা উঠেছিল। তবে ২০ টাকার মতো দাম কমে এখন ১০০ টাকার আশাপাশে বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে ১৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকার আশপাশে।
মাসখানেক আগে যেন আগুন লেগেছিল সবজি বাজারে এখন সেই চিত্র নেই। বেগুন, ধুন্দুল, ঝিঙে, শিমসহ বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
সবসময়.কম/বা,ভি/ডিএস
Leave a Reply